২১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:৫৭ অপরাহ্ন, ২৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি, শুক্রবার, ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নোটিশ
জরুরী ভিত্তিতে কিছুসংখ্যক জেলা-উপজেলা প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া হবে যোগাযোগ- ০১৭১২৫৭৩৯৭৮
সর্বশেষ সংবাদ :
স্ত্রীকে নির্যাতনের মামলায় বরগুনার শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রবিউল হত্যা মামলায় নিরপরাধদের জড়ানোর অভিযোগে বাবুগঞ্জে বিএনপি’র একাংশের সংবাদ সম্মেলন বাবুগঞ্জের ছাত্রদল নেতার খুনিদের গ্রেপ্তার পরবর্তী দৃষ্টান্ত ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ চুয়াডাঙ্গায় ৩ তক্ষকসহ গ্রেফতার ১জন বাবুগঞ্জ এলজিইডি’র এলসিএস কমিউনিটি অর্গানাইজার সানজিদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার ও হয়রানির অভিযোগ জোটের চাপ নাকি অভ্যন্তরীণ কোন্দল? বরিশাল -৩ আসনে এখনো প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। ভোটারদের মাঝে ‘ভিআইপি চমক’-এর গুঞ্জন বাবুগঞ্জে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ক্রীড়া সামগ্রী বিতরণ জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস এর ৫০ বছর পূর্তীতে ঝালকাঠি জেলা জাসাসের উদ্যোগে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাংলাবান্ধায় ভারসাম্যহীন নারী গণধর্ষণেন শিকার চার ধর্ষক আটক বাবুগঞ্জে ছাত্রদল নেতা হত্যাকাণ্ড: ২১ জনের নামে মামলা!
উজিরপুরে অমানবিকতার চরম বহিঃপ্রকাশ: করোনারোগীর লাশ বাড়িতে প্রবেশে বাধা কবর খুঁড়তে দেয়া হয়নি কোদাল

উজিরপুরে অমানবিকতার চরম বহিঃপ্রকাশ: করোনারোগীর লাশ বাড়িতে প্রবেশে বাধা কবর খুঁড়তে দেয়া হয়নি কোদাল

রাহাদ সুমন, বিশেষ প্রতিনিধি॥ প্রাণঘাতী করোনা মানুষের
ভেতরের খোলসটা উন্মোচন করে দিয়েছে। কঠিন এক এক সত্যের সঙ্গে দিয়েছে
পরিচয় করিয়ে। পিতৃত্ব, মাতৃত্ব, ভগ্নি-ভ্রাতৃত্ব, স্বামীত্ব ও স্ত্রীত্ব
সর্বোপরি সব সম্পর্কই নিছক এক স্বার্থের সুতোয় বাঁধা। স্নেহ, শ্রদ্ধা,
প্রেম ভালবাসা এ সবই স্বার্থান্বেষণ ব্যতীত কিছুই নয়। মানুষ
ব্যক্তিকেন্দ্রিক সত্ত্বায় বেড়ে ওঠে, নিজের সুখশান্তি বর্ধনের জন্য সে
সমষ্টিগত রূপে কেবল রূপদান করে- যা নিতান্তই অভিনয়। এ অভিনব চরিত্র দিয়েই
ঘরেবাইরে তার আধিপত্য বিস্তার করে। রক্তের উত্তরাধিকার বলে পারিবারিক
যে সম্পর্কের বেড়াজাল – তা যে নিজ নিজ প্রাণ রক্ষায় ছিন্নভিন্ন করে দিতে
পারে, প্রাণঘাতী করোনা চোখে আঙুল দিয়ে তা দেখাচ্ছে। ‘রক্তের টান’,
প্রাণের টান বা ‘আত্মার টান’ এগুলো কথার কথা। দু-চারটি ব্যতিক্রম ঘটনা
লক্ষ্য করা গেলেও তা তো বিরল বিদগ্ধ প্রাণের টান -যেমন অবচেতন মনে
প্রেমের টানে কপোত-কপোতীর স্বপ্রনোদিত আত্মাহুতি। মানুষ স্বার্থান্ধ। সে
নিজের স্বার্থে অন্যকে ভালবাসে বা আত্মীয়পরিজনকে সূত্র ধরে ব্যবহার করে।
রক্তের অপেক্ষা অনেকে আত্মার সম্পর্ককে বড় বন্ধন বলে জাহির করি। অবশ্য
সমাজবাদীরা রক্তের বন্ধন-কে এগিয়েই রেখেছেন। সমাজের চোখও রক্তকেই প্রকৃত
বন্ধন বলে বিবেচনা করে আসছে। সেটাও পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থার
সহায়সম্পদের ভাগবাটোয়ারার বিষয়। প্রত্যেকটি বন্ধন আজ ফাঁপা বেলুনের মতো
ফেটে যাচ্ছে। বন্ধনের কোনই স্থায়ীত্ব নেই। মানুষ নিজের সুখবর্ধনের জন্যই
স্বার্থান্ধে পরিণত হন। ফলে ঘটে বিপত্তি। স্বার্থে বেঘাত ঘটলেই যেকোন
ধরণের বন্ধন চুকে যাওয়ার ঘটনা অহরহ। করোনা প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে পিতার – আর
পিতার লাশ রাস্তায় কিংবা হাসপাতালে ফেলে রেখে পালিয়ে যাচ্ছে পুত্রকন্যা!
করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে স্বামী- স্ত্রী পালিয়ে যাচ্ছে বাপের বাড়ি।
বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর ঘটনা যদি হয় নিষ্ঠুর, মর্মান্তিক। তাহলে
করোনায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তাকে কি বলবো? চলমান মানবসভ্যতায় এরকম একটি
চরম অমানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বরিশালের উজিরপুরে। জীবিত অবস্থায় নিজ
বাড়ির আঙ্গিনায় যার ছিলো অবাধ বিচরণ। নিজ পরিবার ও প্রতিবেশীদের সাথে
ছিলো কতইনা সখ্যতা। নিজের পরিশ্রমের দ্বারা অর্জিত অর্থে বানিয়েছিলেন
এপারের জন্য একটি স্বপ্নের ঠিকানা। যে ঠিকানায় পিতা-মাতা,স্ত্রী ও
সন্তানসহ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ছিলো তার বসবাস। তবে মৃত্যুর পরে সেই
চিরচেনা ঠিকানার আঙ্গিনায়ও জায়গা হয়নি এমন একজন হতভাগ্য ব্যক্তির। এমন
হৃদয় বিদারক ও অমানবিক ঘটনার অবতারণা হয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার
মুন্সিরতাল্লুক গ্রামে। জানাগেছে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের
স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলম সিদ্দিকের কোভিড-১৯’র ছোবলে গত ২২ জুলাই
বুধবার মৃত্যু হয়। পরে তার লাশ নিয়ে নিজ এলাকা উপজেলার ওটরা ইউনিয়নের
মুন্সিরতাল্লুক গ্রামে গেলে স্বজনরা বাড়ির ভেতরে ঢুকতে দেয়নি। বাধ্য হয়ে
লাশ বহনকারী দল নূরে আলমের মরদেহ নিয়ে বাড়ির অদূরে রাস্তায় অবস্থান করতে
থাকেন। পিতার লাশ নিয়ে আসার খবর শোনার পরে নূরে আলমের একমাত্র ছেলেকে ধরে
রাখতে পারেনি তার পরিবার। এযেন রক্তের সাথে রক্তের টান,স্বার্থের অনেক
উর্ধ্বে। ২৩ জুলাই বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে নূরে আলমকে নিজ বাড়ির
অদূরে রাস্তার পাশে উজিরপুর স্বেচ্ছাসেবী টিমের সদস্যরা দাফন করেন । তবে
একমাত্র ছেলে ছাড়া পরিবারের অন্যকোন সদস্য,এলাকাবাসী এবং প্রতিবেশিরা তার
দাফনে অংশ গ্রহন করেননি। দাফন টিমের সদস্য ও উজিরপুর পৌর কাউন্সিলর মো.
বাবুল সিকদার জানান, করোনায় মৃত ওই স্বাস্থ্যকর্মীর লাশ তার পরিবারের
লোকজন ও স্বজনেরা বাড়িতেই ঢুকাতে দেয়নি। এক পর্যায়ে বাড়ির রাস্তাই বন্ধ
করে দেয়া হয়। এমনকি ওই স্বাস্থ্যকর্মীর ছেলে ছাড়া আর কোনো মানুষ লাশের
কাছেও আসেনি। তিনি আরও জানান, লাশ মাটি দেওয়ার জন্য এলাকার কোনো মানুষ
সামান্য কোদাল পর্যন্ত দেয়নি। শেষে তিনিসহ টিমের অন্যান্য সদস্যরা হাত
দিয়ে মাটি এনে এনে কবর দেওয়া সম্পন্ন করেন। এর আগে ২২ জুলাই বুধবার রাত
সাড়ে ১০টার দিকে বারিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালের করোনা
ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য
কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলম। বিষয়টি নিশ্চিত করে উজিরপুর
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শওকত আলী জানিয়েছেন,
স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্বাস্থ্য সহকারী নূরে আলমকে দাফন করা হয়েছে। ##

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2019